মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শালিক কথন --- আসিফ আহমেদ

 শালিক অতি পরিচিত পাখি। মাঝারি আকারের বৃক্ষচর এই পাখি Passeriformes বর্গের Sturnidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। Sturnidae শব্দটি লাতিন Sturnus থেকে নেওয়া। শালিকের ইংরেজি নাম স্টারলিং। বিশ্বে প্রায় ১০৪ প্রজাতির শালিক রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ প্রজাতি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়। বাংলাদেশে আছে ১২ প্রজাতি। এ দেশের কিছু স্থানীয় সাদা-কালো শালিককে ডাকা হয় গো-শালিক বা গোবরে-শালিক নামে। এদের ঠোঁটের রং গাঢ় কমলা-হলুদ এবং চোখের মণি হালকা হলুদ রঙের। অন্যদিকে ঝুঁটি-শালিকও সাদা-কালো রঙের হয় কিন্তু এর মাথায় একটি ঝুঁটি রয়েছে। গাঢ় বাদামি শালিককে বলা হয় ভাত শালিক। এদের ঠোঁট ও পা উজ্জ্বল হলুদ রঙের। এর বাইরেও রয়েছে গাঙশালিক, বামন-শালিক ইত্যাদি।




শালিকের স্বরতন্ত্রী বেশ জটিল হওয়ায় এদের ডাক বিচিত্র ও বিভিন্ন স্বরে ওঠানামা করে। এরা খুব সহজেই আশেপাশের আওয়াজ আর মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে। এরা মানুষের গলার স্বর শুনে নির্দিষ্ট কাউকে চিনতে সক্ষম এবং বর্তমানে এরা মানব ভাষা বিষয়ক গবেষণার বিষয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে।গায়ক পাখি হিসেবেও শালিকের বেশ  সুনাম  রয়েছে, তবে কাঠ-শালিক সবচাইতে ভালো গাইতে পারে। প্রায় সব প্রজাতির শালিকই বিভিন্ন স্বরে ডাকতে পারে এবং অন্য শালিকের কণ্ঠ নকল করতে পারে।

সামাজিক পাখি হিসেবে শালিকের সুনাম রয়েছে। এরা দলবেঁধে ডাকে ও ঝগড়াঝাঁটিও করে।

শালিক বাসা বানায় গাছের খোঁড়ল ও দালানের ফোকরে; কখনো গাছের ওপরে খড় ও ডালপালায় বড় গোলাকার কাঠামো তৈরি করে। ডিম পাড়ে ২ থেকে ৯টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২১ দিন। বাচ্চা শালিক ১৯ থেকে ২৭ দিন পর উড়তে শুরু করে।


মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯

বনের রাজা

বনের সবচেয়ে লম্বা প্রাণী জিরাফ যার উচ্চতা ঊনিশ ফুট পর্যন্ত হতে পারে যেখানে বনের রাজা সিংহের উচ্চতা মাত্র চার ফুট!
বনের সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতির ওজন যেখানে আঠারো ঊনিশ হাজার কেজি সেখানে বনের রাজা সিংহের ওজন মাত্র একশ থেকে দুইশো কেজি পর্যন্ত হয়!
বনের সবচেয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন প্রাণী চিতা বাঘ যে সত্তর মাইল বেগে দৌড়াতে পারে সেখানে সিংহ শরীরের ওজনের কারণে পাঞ্চাশ মাইল বেগ উঠাতে হিমশিম খেতে থাকে!
বনের বুদ্ধিজীবী শিম্পাঞ্জির মতো সিংহের এতো বুদ্ধি টুদ্ধিও নেই!
বনের অন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে হালের পিঁপড়াও সিংহের চেয়ে কর্মঠ কারণ সিংহরা অলস প্রকৃতির হয়!
অবসর সময়ে অলস হয়ে ঘুমিয়ে থাকা সিংহের আরেকটি আর্ট!
তবুও সিংহ বনের রাজা কারণ সিংহের রয়েছে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব! সে একান্ত ক্ষুধা না লাগলে অন্য প্রাণীদের আক্রমণ করেনা!
সিংহ এমন এক প্রকৃতির প্রাণী যে কখনো বনের অন্য কোন প্রাণীকে পরোয়া করে চলতে শিখেনি!
প্যানথেরাগণের চারটি বৃহৎ বিড়ালের মধ্যে সিংহ একটি অথচ একজনের আচরণ হালুম! হালুম! রাজার মতো অন্যজনের ম্যাও! ম্যাও! প্রজার মতো!
সিংহরা নিজের থেকেও এলাকা এবং পরিবার পরিজন রক্ষার্থে প্রয়োজনে সহিংস হয়ে উঠে!
গবেষণায় দেখা গেছে বনের অন্যান্য প্রাণীরাও সিংহকে সমীহ করে চলে তার মনোভাব কিংবা এটিচ্যুয়েডের কারণে সে যেটা নিজের মধ্যে লালন করে চলে যে আমিই সেরা!
সিংহ যদি ভাবতো আমি লম্বা না বেটে, বড় না ছোট, কর্মঠ না বরং অলস, দ্রুত গতির না কম গতি সম্পন্ন, বুদ্ধিমান না বরং বোকা তাহলে সে কখনো বনের রাজা ট্যাগ পেতো না!
প্রায় একশো বর্গকিলোমিটার রাজ্যে এক একটা সিংহ আধিপত্য করে থাকে ভাবটা এমন এটা তো আমার অঞ্চল!
রাজকীয় ভঙ্গি, দৃঢ় পদচারনা, কঠিন মনোভাব থাকা সত্ত্বেও শিকার করার ক্ষেত্রে সিংহের সফলতার হার মাত্র সতের আঠারো পার্সেন্ট মানে প্রতি দশবারে আট বার সে ব্যর্থ হয় তবুও সে দমে যায় না অদম্য বলেই বনের রাজা খ্যাতি লাভ করেছে!
সিংহ নিঃশব্দে শিকার করে জীবনের প্রয়োজনে তার তখন এতো হুংকার ঝংকার থাকে না!
আত্মরক্ষা কিংবা ক্ষুধার কারণ ছাড়া সে অকারণে অন্য প্রাণী হত্যা করে না!
প্রকৃতিতে সিংহ তার পরিবারের খেয়াল রাখে শেয়ার কেয়ারের মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে,
সিংহ সব সময় বিপদে আপদে একে অপরের পাশে থাকে!
বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী প্রাণী সিংহ,
সিংহের তো তবুও শরীর সামর্থ্য কিছুতো আছে সে বনে থাকে নখ আছে ভাব থাকে
কিন্তু,
এই যে মশাটি এখন কামড় দিয়ে গেলো সে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী প্রাণী যে জীবন ধারণের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষের সাথে খেলে চলে কিন্তু তার কোন কিছু নেই শুধু বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছাড়া!
যারা বলে আমার তো মামা নেই, বাবা নেই, টাকা নেই, ক্ষমতা নেই, সামর্থ্য নেই, এটা নেই ওটা নেই সেটা নেই তাদের জন্য মশা হলো সবচেয়ে বড় মোটিভেশন!
মশারা আড়াই দিন বাঁচে তবুও বেঁচে থাকার জন্য জীবন বাজি রাখে........!

মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯

হামিং বার্ড(Smallest bird in the world)
ছোট্ট চড়ুই পাখি সারা দিন ফুড়ুত ফুড়ুত করে গাছের এ-ডাল থেকে ও-ডালে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট্ট এক পাখি দেখা যায়। চড়ুইয়ের মতোই সারা দিন ডানা ঝাঁপটিয়ে ওড়াউড়িতে তাদের ক্লান্তি নেই মোটেই। 
মজার ব্যাপার হলো, এই পাখি যখন ওড়ে তখন তার ডানার দ্রুত সঞ্চালনের ফলে বাতাসে গুনগুন শব্দ হয়। গুনগুন করাকে ইংরেজিতে হামিং (Humming) বলে। এ জন্যই এই পাখির নাম হামিং বার্ড। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হলো এই হামিং বার্ড।

 এই পাখি খুব শৌখিন। অতি উজ্জ্বল গায়ের রং। পালকের উজ্জ্বল রং ও বৈচিত্র্যের কারণে স্ত্রী পাখিদের তুলনায় পুরুষ হামিং বার্ড দেখতে বেশি সুন্দর। এই পাখির বাসা দেখলেই এর শৌখিনতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্যান্য পাখি যেমন খড়কুটো, গাছের পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে, সেখানে এরা বাসা তৈরি করে কোমল পালক এবং ফুলের পাপড়ি দিয়ে। সেই নরম তুলতুলে বাসায় এরা শুধু রাতেই বিশ্রাম নেয়। অবিরাম ছোটাছুটির কারণে দিনে বিশ্রাম নেওয়ার সময় কোথায়?

গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার উড়তে পারে এরা। ওড়ার সময় এদের ছোট্ট দুটি ডানা গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৮০ বার ওঠানামা করে। তখন এদের ডানার পালক পর্যন্ত দেখা যায় না। চোখে পড়ে শুধু আবছা এক রঙের ছটা। দ্রুত ডানা সঞ্চালনের আশ্চর্য এই ক্ষমতার জন্য হামিং বার্ড উড়ন্ত অবস্থায় শূন্যে এক জায়গায় স্থির হয়ে ভেসে থাকতে পারে। এতে অবশ্য তার লাভই হয়। কারণ, উড়তে উড়তেই খাবারটা সংগ্রহ করে নেওয়া যায়। এ জন্য পায়ের ওপর ভর দিয়ে কোনো ডালে বসতে হয় না। তা ছাড়া, পায়ের চেয়ে ডানার ওপরই এদের ভরসা বেশি।
হামিং বার্ড ফুল থেকে মধু খাওয়ার সময়ও শূন্যে ভেসে থাকে। এভাবেই তারা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে গিয়ে মধু খায়। তারা সারা দিন যেহেতু ডানা সঞ্চালনের ওপর নির্ভর করে কাটায়, এ জন্য তাদের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে এই পাখি সারা দিনে প্রচুর খায় আর শক্তি সঞ্চয় করে। অথচ রাতের বেলা এদের উল্টো অবস্থা। তখন শুধুই বিশ্রাম। ফলে রাতে এদের ক্যালরি খরচের ভয় নেই। 

একটি হামিং বার্ডের সারা দিন যে ক্যালরি লাগে, তা একজন বয়স্ক মানুষের প্রয়োজনীয় ক্যালরির তুলনায় প্রায় ৪০ গুণ বেশি। 
শুধু পাখি কেন, পৃথিবীতে উষ্ণ রক্তের আর এমন কোনো প্রাণী নেই, যার দেহের অনুপাতে এত বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। অথচ পুঁচকে এই পাখি দৈর্ঘ্যে হয় মাত্র ৫.৭ সেন্টিমিটার এবং ওজন হয় মাত্র ১.৬ গ্রাম। অর্থাৎ কাগজের একটি খামের ওজনের সমান এদের ওজন।

স্ত্রী হামিং বার্ড একবারে সাধারণত দুটি ডিম পাড়ে। সাদা রঙের এই ডিম আকারে যত ছোটই হোক তা স্ত্রী হামিং বার্ডের ওজনের ১৩ শতাংশ। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে তিন সপ্তাহ। তারপর এক মাসের মধ্যেই বাচ্চা উড়তে শিখে যায়। হামিং বার্ড বেজায় সাহসী। সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। কারণ, সাধ্যে না কুলালে ফুড়ুত করে উড়াল দিয়ে বিপদ এড়িয়ে কীভাবে পালাতে হয়, তা এরা ভালোই জানে।
বৈজ্ঞানিক নাম : Archilochus colubris
প্রজাতির সংখ্যা : ৩১৫
প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট : বি হামিং বার্ড
বাসস্থান : আমেরিকা
গড় আয়ু : ১-২ বছর

বুধবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

একজন হোমো স্যাপিয়েন্স


ছেলেটাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল এই জন্য যে, তার স্মৃতি শক্তি অত্যধিক দুর্বল। এই ছেলেকে দিয়ে জীববিজ্ঞানের মতো ভাইটাল সাবজেক্ট পড়া সম্ভব না। তাকে অন্য বিষয় পড়তে দেয়া হোক যেটা তার জন্য সোজা। পরবর্তীকালে ইনিই হয়েছিলেন দ্বিপদ নামকরনের জনক। বিশ্ব তাকে চেনে বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস নামে।
লিনিয়াসের জন্ম দক্ষিণ সুইডেনের সামালান্দের এক গ্রামে। তার পূর্বপুরুষ কেউই শেষ নাম ব্যবহার করতেন না। তাদের নাম রাখা হতো স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশের প্যাট্রোনিমিক (পিতার নামের সাথে সংযুক্ত) নিয়মে। তার বাবাই প্রথম শেষ নামের প্রচলন করেন। বাড়ির সামনের এক বিশাল লিন্ডেন গাছের নামানুসারে লিনিয়াস নামটিই বেছে নেন।ক্যারোলাস লিনিয়াসের জন্ম ১৭০৭ সালে সুইডেনের স্মেলেন প্রদেশের র‌্যাশাল গ্রামে। পিতা নিলস লিনিয়াস গির্জার পাদরি। মা-বাবা চেয়েছেন তিনিও যাজক হবেন, কিন্তু হলেন চিকিৎসক।খনিজ, উদ্ভিদ নিয়ে লেখালেখি করে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। লিনিয়াস শিক্ষাজীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন উপসালা ইউনিভার্সিটিতে। ১৭৩০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৭৩৫ থেকে ১৭৩৮ সাল পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন এবং এ সময়ই নেদারল্যান্ড থেকে তার Systema Naturae গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এরপর সুইডেনে ফিরে এসে উপসালাতে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৭৪০-এর দশকে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস করার জন্য তাকে সুইডেনের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছিল। ১৭৫০ ও ৬০-এর দশকে তিনি এই শ্রেণীবিন্যাস চালিয়ে যান এবং ভলিউম ভলিউম বই প্রকাশ করেন। অনেক প্রাণী বা উদ্ভিদের দ্বিপদী নামের শেষে যে নাম রেখেছেন তার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ স্থান পায়। ।লিনিয়াস যে নামগুলো রেখেছেন সেগুলোর শেষে "L" অক্ষরটি থাকে।
লিনিয়াস উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিগুলোর নামকরণের নৈরাজ্য দূর করে দ্বিপদী নামকরণ চালু করেন। তাঁর প্রবর্তিত নামকরণের আগে বিভিন্ন প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম ছিল অনেক দীর্ঘ। লিনিয়াস মানুষ প্রজাতির নাম রাখেন Homo sapiens . লিনিয়াস ভিন্নার্থে এটি ব্যবহার করেছিলেন—হোমো স্যাপিয়েন্স হলো—হোমো ‘নসে তে ইপসাম’ অর্থাৎ Man know thyself—আত্মানং বিধ্বি, মানুষ নিজেকে জানো। গভীরতর অর্থবহ এই অভিধা। আগেও মানুষ ছিল হোমো ইরেকটাস, হোমো হ্যাবিলিস, হোমো নিয়ানডারথেলেনসিস ইত্যাদি। সাত হাজার ৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও চার হাজার ৪০০ প্রাণীর নামকরণ ছাড়াও তিনি স্পিসিস প্লান্টারাম (১৭৫৩), জেনেরা প্লান্টারাম (১৭৫৪) ও সিস্টেমা ন্যাচারই (১৭৫৮) বইয়ের লেখক। প্রথম দুটি উদ্ভিদ ও তৃতীয়টি প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস ও নামকরণবিষয়ক এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
মৃত্যুর সময় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি ১৭৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কবরের নামফলকে শেষ ইচ্ছানুসারে লিনিয়াসের নামের পাশে Homo sapiens শব্দটি যুক্ত হয়েছে।

রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮

জৈবপ্রযুক্তি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং


জৈবপ্রযুক্তি (Biotechnology) হল বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত নীতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করে জীবদের ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষের জন্য কল্যাণকর ও ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালামাল তৈরির বিশেষ প্রযুক্তি। এটি মূলত জীববিদ্যা ভিত্তিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে যখন প্রযুক্তি কৃষিখাদ্য বিজ্ঞান, এবং ঔষধশিল্পে ব্যবহৃত হয়।জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলোজিক্যাল ডাইভার্সিটি অনুসারে জৈব প্রযুক্তিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়:[১]
যে কোন প্রকারের প্রায়োগিক প্রাযুক্তিক কাজ যা জৈবিক ব্যবস্থা, মৃত জৈবিক বস্তু অথবা এর থেকে প্রাপ্ত কোন অংশকে কোন দ্রব্য বা পদ্বতির নির্দিষ্ট বা বিশেষ ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(Any technological application that uses biological systems, dead organisms, or derivatives thereof, to make or modify products or processes for specific use.)
বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে,  প্রাণী বা উদ্ভিদ জীবের ক্ষুদ্রতম একক হলো কোষ (cell)। কোষের প্রাণকেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস (Nucleus) বলা হয়। এই নিউক্লিয়াসের ভিতরে বিশেষ কিছু পেঁচানো বস্তু থাকে যাকে বলা হয় ক্রোমোজোম (Chromosome)।ক্রোমোজোম জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। ক্রোমোজোমের মধ্যে আবার চেইনের মত পেঁচানো কিছু বস্তু থাকে যাকে ডিএনএ বলা (DNA-Deoxyribo Nucleic Acid) হয়। এই ডিএনএ অনেক অংশে ভাগ করা থাকে । এর এক একটি নির্দিষ্ট অংশকে বলে জীন (Gene)। মূল্পতঃ ক্রোমোজোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত জীনই জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে মানুষের শরীরে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে এবং বিড়ালের রয়েছে ৩৪ জোড়া। আবার মশার আছে ৬ জোড়া। এদের মধ্যে একজোড়া ক্রোমোজোম বংশগতির বাহক। আমাদের শরীরে প্রায় ৩০০০০০ জীন রয়েছে। এক সেট পূর্ণাঙ্গ জীনকেজীনোম (Genome) বলা হয় ।


মূল কথা দাড়ায় এই যে, বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে কোন প্রাণীর জিনোমকে (Genome) নিজের সুবিধানুযায়ী সাজিয়ে নেয়া বা মডিফাই করাকেই  জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জেনেটিক মডিফিকেশন বলে ।
জিনোম হলো কোন জীবের বংশগত বৈশিষ্টের তথ্য।জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে কখনও কখনও প্রাণীরবংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত ডিএনএ সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে অথবা প্রাণীদেহের বাইরে প্রস্তুতকৃত ডিএনএ প্রাণীদেহেপ্রবেশ করানোর মাধ্যমে প্রাণীর জেনেটিক গঠনের পরিবর্তন ঘটানো হয়।উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিকম্যাটেরিয়াল এর নতুন সমাবেশ তৈরির জন্য Recombinant Nucleic Acid ( DNA or RNA)পদ্ধতি ব্যবহারকরতে হয় । জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এর নতুন সমাবেশ পরোক্ষভাবে ভেক্টর সিস্টেম প্রয়োগ করে অথবা প্রত্যক্ষভাবে micro-injection, macro-injection এবং micro-encapsulation প্রদ্ধতি প্রয়োগ করে তৈরি করা হয়।
১৯৫১ সালে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটি প্রথম ব্যাবহার করেন Jack Williamson তার একটি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস Dragon’s Island এ। তার এক বছর আগে DNA যে বংশগতির বাহক তা নিশ্চিত করেন Alfred Hershey and Martha Chase ।
Herbert Boyer এবং Robert Swanson ১৯৭৬ সালে বিশ্বের প্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি“Genetech” প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক বছর পর  “Genetech” E.coli ব্যাকটেরিয়া থেকে মানব প্রোটিন somatostatin  উৎপাদন করে যা হিউম্যান ইনসুলিন (Human Insulin) হিসেবে সুপরিচিত। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে চীন ভাইরাস প্রতিরোধকারী তামাক গাছের প্রবর্তনের মাধ্যমে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদকে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক রুপ দান করেন।
চিকিৎসা, গবেষণা, শিল্প এবং কৃষিসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে  ইন্সুলিন, হিউম্যান গ্রোথ হরমোন, follistim ( বন্ধ্যত্ব চিকিৎসারজন্য ), হিউম্যান অ্যালবুমিন, ভ্যাক্সিন এবং অনেক প্রকারের ঔষধ উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও genetically modified ইঁদুর দিয়ে মানবদেহের বিভিন্ন রোগসংক্রান্ত গবেষণা চালানো হয়। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিস্থাপন সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য genetically modified শুকর শাবক উৎপাদন করা হয়েছে।
প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের কাছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারারিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি হাতিয়ার। গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রাণীর জীন ও অন্যান্য জেনেটিক তথ্য genetically modified ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়াও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জীনের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ সম্পর্কে গবেষণা করা হয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আণুবিক্ষণিক জীব যেমন- ব্যাক্টেরিয়া, ইস্ট, অথবা ইনসেক্টম্যামালিয়ান সেল ইত্যাদি থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদন করা যায়। Genetically modified crops এবং Genetically Modified Organism বা GMO হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি বিতর্কের বিষয়। তবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলতঃ কৃষিকে ঘিরেই বেশি পরিচালিত হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে কৃষিতে  Genetically modified crops উৎপাদনের লক্ষ্য হচ্ছে — ১) পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে শস্যকে রক্ষা করা, ২) শস্য থেকে সম্পর্ণ নতুন উপাদান উৎপাদন করা, ৩) শস্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা, ৪) শস্যের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা,৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদি ।
তথ্যসূত্র ঃ techmorich.com , উইকিপিডিয়া ।

শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮

কৃষ্ণসার হরিণ

বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে বন্যপ্রাণী কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভারতীয় আদালত। ১৯৯৮ সালে বলিউড মুভি "হাম সাথ সাথ হে" শুটিং চলাকালে যোধপুরের কাছে কানকানি গ্রামে তিনি বিরল প্রজাতির ২টি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেন। ভারতীয় আইন অনুযায়ী পশু শিকার নিষিদ্ধ।কৃষ্ণশার বা কৃষ্ণসার (ইংরেজি: Blackbuck; বৈজ্ঞানিক নাম: Antilope cervicapra) এন্টিলোপ গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রকার হরিণবিশেষ। প্রধানতঃ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে এদের আবাসস্থল। এছাড়াও, পাকিস্তানের কিছু অংশসহ নেপালে এদেরকে দেখা যায়। পূর্ব পাঞ্জাবের আঞ্চলিক প্রাণী হিসেবে কৃষ্ণসার একটি স্বীকৃত প্রাণী ।

পুরুষ ও স্ত্রীজাতীয় কৃষ্ণসারের দেহকাঠামোর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পুরুষ কৃষ্ণসার ঘন বাদামী, কালো এবং সাদা রঙের হয়ে থাকে। এদের পেঁচানো শিং রয়েছে। অন্যদিকে স্ত্রীজাতীয় কৃষ্ণসারের কোন শিং নেই এবং ফন রঙের অধিকারী। কব হরিণের সাথে কৃষ্ণসারের বেশ মিল রয়েছে।[২] এদের দেহের দৈর্ঘ্য: ১০০-১৫০ সেন্টিমিটার (৩.৩-৪.৯ ফুট); কাঁধের দৈর্ঘ্য: ৬০-৮৫ সে.মি (২-২.৭৯ ফুট); লেজের দৈর্ঘ্য: ১০-১৭ সে.মি. (৩.৯-৬.৭ ইঞ্চি) এবং ওজন: ২৫-৩৫ কেজি (৫৫-৭৭ পাউন্ড) হয়ে থাকে।সাধারণত উন্মুক্ত সমান্তরাল স্থানে দলবদ্ধ হয়ে থাকতে এরা পছন্দ করতে ভালবাসে। একটি প্রভাববিস্তারকারী পুরুষজাতীয় কৃষ্ণসারের নিয়ন্ত্রণে থেকে ১৫ থেকে ২০টি স্ত্রীজাতীয় কৃষ্ণসার একত্রে থাকে। এরা খুবই দ্রুত চলে। তাদের গতিবেগ ঘন্টায় ৮০ কিমি/ঘ (৫০ মা/ঘ) রেকর্ড করা হয়েছে।[৭] তাদের মূল খাদক হিসেবে ভারতীয় চিতা বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে নেকড়ে বাঘ ও বন্য কুকুরের কবলে পড়ে শিকারে পরিণত হয়ে থাকে।কৃষ্ণসার প্রধানতঃ ঘাস খেয়ে জীবনধারণ করে। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের বীজ, ফুল এবং ফল সহায়ক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের সর্বোচ্চ জীবনকাল ১৬ বছর এবং গড় আয়ু ১২ বছর।কৃষ্ণসার তার মাংস ও চামড়ার কারণে মানুষের শিকারে পরিণত হয়। ভারতীয় আইন অনুযায়ী পশু শিকার নিষিদ্ধ হলেও মাঝে মধ্যে এ বিপন্ন প্রাণী হত্যার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও, জনসংখ্যাধিক্যজনিত কারণে বন বিলুপ্ত হচ্ছে। গৃহপালিত প্রাণীকে বনে ঘাস গ্রহণের লক্ষ্যে পাঠানোয় রোগ ছড়িয়ে তাদের মাঝে সংক্রমিত হচ্ছে।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮

জোনাকি পোকা।

রাতের আকাশে যেভাবে মিটমিট করে তারা জ্বলতে থাকে , ঠিক তেমনই পৃথিবীর বুকে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা ছোট্ট পোকাটির নাম জোনাকি পোকা। শহরের আলোয় এই সুন্দর পোকাটি নজরে না পড়লেও গ্রামে রাতের বেলা অসংখ্য জোনাকি পোকা দেখা যায়। মনে হয় রাতের আকাশের তারা মাঠের ওপর নেমে এসেছে। জোনাকি পোকা ইংরেজিতে যার নাম  Fire Fly । 




Insecta পরিবারের একটি গুবরে পোকার বর্গ হল Coleoptera এই বর্গের পাখাওয়ালা গুবরে পোকা যাদেরকে সাধারণভাবে জোনাকি পোকা বলা হয় ।  দের জীবনকাল শুধুমাত্র ১ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ একটি জোনাকি পোকা খুব বেশি হলে মাত্র ৩ সপ্তাহ আলো জ্বেলে দিতে পারে পৃথিবীর বুকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই জোনাকি পোকার দেহে আলো জ্বলে কিভাবে? এতো ছোট্ট একটি প্রাণীর দেহে আলোর ব্যবস্থা হয় কিভাবে?জোনাকি পোকার দেহ থেকে আলো বিচ্ছুরণের মূল মাধ্যম হলো লুসিফারিন (luciferin) নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ।কারন তারা জৈব রাসায়নিক ব্যবস্থায় নিজের শরীর থেকে আলো উৎপন্ন করে। এরা এই আলো দ্বারা যৌন মিলন ঘটানো বা শিকারের উদ্দেশ্যে জ্বেলে থাকে। এরা কোল্ড লাইট বা নীলাভ আলো উৎপন্ন করে কোন আল্ট্রাভায়োলেট বা ইনফ্রারেড তরঙ্গ ছাড়া।  এই আলো আসে  লুসিফারিন ,  অক্সিজেন  ATP এর সংমিশ্রণে লুসিফারেজ  দ্বারা অনুঘটিত জারণ  থেকে।রাতের অন্ধকারে এদের তারার মত মিটমিট করতে দেখা যায়। এরা সমবেতভাবে এক ছন্দে মিটমিট করতে দেখা যায়। এরা সমবেতভাবে এক ছন্দে মিটমিট করতে পারে।


                                                  চিত্রঃ লুসিফারিন 

এই আলোর রং হলুদ, সবুজ বা ফিকে লাল হতে পারে। আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হল ৫১০ থেকে ৬৭০ ন্যানোমিটার।প্রায় ২০০০ জোনাকির প্রজাতি পাওয়া গেছে গ্রীষ্ম এবং নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের এলাকায়। অনেকেই ভেজা, কাঠ আছে এমন এলাকা বা ডোবা জাতীয় এলাকায় থাকে । যেখানে তাদের লার্ভা বেচে থাকার অনেক খাদ্য পায়। তাদের ছানা বা কীটগুলো থেকেও আলো নির্গত হয় এদের গ্লোওয়ার্ম বলা হয়। আমেরিকায় এই গ্লোওয়ার্মকে Phengodidae  বলা হয়। অনেক প্রজাতিতেই নারী পুরুষ উভয় পতঙ্গ উড়তে পারে, কিন্তু কিছু প্রজাতির স্ত্রীরা উড়তে অক্ষম । আমাদের দেশে শুধুমাত্র সবুজ আলোর জোনাকি পোকা দেখা যায় , তবে পৃথিবীর অনান্য দেশে  লাল ও সবুজ আলোর জোনাকি পোকা দেখা যায়
তথ্যসূত্র ঃ Wikipedia , priyo.com 
 ছবিগুলো Internet থেকে নেওয়া হয়েছে ।