রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮

জৈবপ্রযুক্তি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং


জৈবপ্রযুক্তি (Biotechnology) হল বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত নীতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করে জীবদের ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষের জন্য কল্যাণকর ও ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালামাল তৈরির বিশেষ প্রযুক্তি। এটি মূলত জীববিদ্যা ভিত্তিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে যখন প্রযুক্তি কৃষিখাদ্য বিজ্ঞান, এবং ঔষধশিল্পে ব্যবহৃত হয়।জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলোজিক্যাল ডাইভার্সিটি অনুসারে জৈব প্রযুক্তিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়:[১]
যে কোন প্রকারের প্রায়োগিক প্রাযুক্তিক কাজ যা জৈবিক ব্যবস্থা, মৃত জৈবিক বস্তু অথবা এর থেকে প্রাপ্ত কোন অংশকে কোন দ্রব্য বা পদ্বতির নির্দিষ্ট বা বিশেষ ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(Any technological application that uses biological systems, dead organisms, or derivatives thereof, to make or modify products or processes for specific use.)
বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে,  প্রাণী বা উদ্ভিদ জীবের ক্ষুদ্রতম একক হলো কোষ (cell)। কোষের প্রাণকেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস (Nucleus) বলা হয়। এই নিউক্লিয়াসের ভিতরে বিশেষ কিছু পেঁচানো বস্তু থাকে যাকে বলা হয় ক্রোমোজোম (Chromosome)।ক্রোমোজোম জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। ক্রোমোজোমের মধ্যে আবার চেইনের মত পেঁচানো কিছু বস্তু থাকে যাকে ডিএনএ বলা (DNA-Deoxyribo Nucleic Acid) হয়। এই ডিএনএ অনেক অংশে ভাগ করা থাকে । এর এক একটি নির্দিষ্ট অংশকে বলে জীন (Gene)। মূল্পতঃ ক্রোমোজোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত জীনই জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে মানুষের শরীরে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে এবং বিড়ালের রয়েছে ৩৪ জোড়া। আবার মশার আছে ৬ জোড়া। এদের মধ্যে একজোড়া ক্রোমোজোম বংশগতির বাহক। আমাদের শরীরে প্রায় ৩০০০০০ জীন রয়েছে। এক সেট পূর্ণাঙ্গ জীনকেজীনোম (Genome) বলা হয় ।


মূল কথা দাড়ায় এই যে, বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে কোন প্রাণীর জিনোমকে (Genome) নিজের সুবিধানুযায়ী সাজিয়ে নেয়া বা মডিফাই করাকেই  জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জেনেটিক মডিফিকেশন বলে ।
জিনোম হলো কোন জীবের বংশগত বৈশিষ্টের তথ্য।জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে কখনও কখনও প্রাণীরবংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত ডিএনএ সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে অথবা প্রাণীদেহের বাইরে প্রস্তুতকৃত ডিএনএ প্রাণীদেহেপ্রবেশ করানোর মাধ্যমে প্রাণীর জেনেটিক গঠনের পরিবর্তন ঘটানো হয়।উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিকম্যাটেরিয়াল এর নতুন সমাবেশ তৈরির জন্য Recombinant Nucleic Acid ( DNA or RNA)পদ্ধতি ব্যবহারকরতে হয় । জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এর নতুন সমাবেশ পরোক্ষভাবে ভেক্টর সিস্টেম প্রয়োগ করে অথবা প্রত্যক্ষভাবে micro-injection, macro-injection এবং micro-encapsulation প্রদ্ধতি প্রয়োগ করে তৈরি করা হয়।
১৯৫১ সালে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটি প্রথম ব্যাবহার করেন Jack Williamson তার একটি সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস Dragon’s Island এ। তার এক বছর আগে DNA যে বংশগতির বাহক তা নিশ্চিত করেন Alfred Hershey and Martha Chase ।
Herbert Boyer এবং Robert Swanson ১৯৭৬ সালে বিশ্বের প্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি“Genetech” প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক বছর পর  “Genetech” E.coli ব্যাকটেরিয়া থেকে মানব প্রোটিন somatostatin  উৎপাদন করে যা হিউম্যান ইনসুলিন (Human Insulin) হিসেবে সুপরিচিত। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে চীন ভাইরাস প্রতিরোধকারী তামাক গাছের প্রবর্তনের মাধ্যমে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদকে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক রুপ দান করেন।
চিকিৎসা, গবেষণা, শিল্প এবং কৃষিসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে  ইন্সুলিন, হিউম্যান গ্রোথ হরমোন, follistim ( বন্ধ্যত্ব চিকিৎসারজন্য ), হিউম্যান অ্যালবুমিন, ভ্যাক্সিন এবং অনেক প্রকারের ঔষধ উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও genetically modified ইঁদুর দিয়ে মানবদেহের বিভিন্ন রোগসংক্রান্ত গবেষণা চালানো হয়। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিস্থাপন সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য genetically modified শুকর শাবক উৎপাদন করা হয়েছে।
প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের কাছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারারিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি হাতিয়ার। গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রাণীর জীন ও অন্যান্য জেনেটিক তথ্য genetically modified ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়াও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জীনের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ সম্পর্কে গবেষণা করা হয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আণুবিক্ষণিক জীব যেমন- ব্যাক্টেরিয়া, ইস্ট, অথবা ইনসেক্টম্যামালিয়ান সেল ইত্যাদি থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদন করা যায়। Genetically modified crops এবং Genetically Modified Organism বা GMO হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি বিতর্কের বিষয়। তবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলতঃ কৃষিকে ঘিরেই বেশি পরিচালিত হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে কৃষিতে  Genetically modified crops উৎপাদনের লক্ষ্য হচ্ছে — ১) পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে শস্যকে রক্ষা করা, ২) শস্য থেকে সম্পর্ণ নতুন উপাদান উৎপাদন করা, ৩) শস্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা, ৪) শস্যের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা,৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদি ।
তথ্যসূত্র ঃ techmorich.com , উইকিপিডিয়া ।

শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮

কৃষ্ণসার হরিণ

বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে বন্যপ্রাণী কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভারতীয় আদালত। ১৯৯৮ সালে বলিউড মুভি "হাম সাথ সাথ হে" শুটিং চলাকালে যোধপুরের কাছে কানকানি গ্রামে তিনি বিরল প্রজাতির ২টি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেন। ভারতীয় আইন অনুযায়ী পশু শিকার নিষিদ্ধ।কৃষ্ণশার বা কৃষ্ণসার (ইংরেজি: Blackbuck; বৈজ্ঞানিক নাম: Antilope cervicapra) এন্টিলোপ গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রকার হরিণবিশেষ। প্রধানতঃ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে এদের আবাসস্থল। এছাড়াও, পাকিস্তানের কিছু অংশসহ নেপালে এদেরকে দেখা যায়। পূর্ব পাঞ্জাবের আঞ্চলিক প্রাণী হিসেবে কৃষ্ণসার একটি স্বীকৃত প্রাণী ।

পুরুষ ও স্ত্রীজাতীয় কৃষ্ণসারের দেহকাঠামোর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পুরুষ কৃষ্ণসার ঘন বাদামী, কালো এবং সাদা রঙের হয়ে থাকে। এদের পেঁচানো শিং রয়েছে। অন্যদিকে স্ত্রীজাতীয় কৃষ্ণসারের কোন শিং নেই এবং ফন রঙের অধিকারী। কব হরিণের সাথে কৃষ্ণসারের বেশ মিল রয়েছে।[২] এদের দেহের দৈর্ঘ্য: ১০০-১৫০ সেন্টিমিটার (৩.৩-৪.৯ ফুট); কাঁধের দৈর্ঘ্য: ৬০-৮৫ সে.মি (২-২.৭৯ ফুট); লেজের দৈর্ঘ্য: ১০-১৭ সে.মি. (৩.৯-৬.৭ ইঞ্চি) এবং ওজন: ২৫-৩৫ কেজি (৫৫-৭৭ পাউন্ড) হয়ে থাকে।সাধারণত উন্মুক্ত সমান্তরাল স্থানে দলবদ্ধ হয়ে থাকতে এরা পছন্দ করতে ভালবাসে। একটি প্রভাববিস্তারকারী পুরুষজাতীয় কৃষ্ণসারের নিয়ন্ত্রণে থেকে ১৫ থেকে ২০টি স্ত্রীজাতীয় কৃষ্ণসার একত্রে থাকে। এরা খুবই দ্রুত চলে। তাদের গতিবেগ ঘন্টায় ৮০ কিমি/ঘ (৫০ মা/ঘ) রেকর্ড করা হয়েছে।[৭] তাদের মূল খাদক হিসেবে ভারতীয় চিতা বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে নেকড়ে বাঘ ও বন্য কুকুরের কবলে পড়ে শিকারে পরিণত হয়ে থাকে।কৃষ্ণসার প্রধানতঃ ঘাস খেয়ে জীবনধারণ করে। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের বীজ, ফুল এবং ফল সহায়ক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের সর্বোচ্চ জীবনকাল ১৬ বছর এবং গড় আয়ু ১২ বছর।কৃষ্ণসার তার মাংস ও চামড়ার কারণে মানুষের শিকারে পরিণত হয়। ভারতীয় আইন অনুযায়ী পশু শিকার নিষিদ্ধ হলেও মাঝে মধ্যে এ বিপন্ন প্রাণী হত্যার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও, জনসংখ্যাধিক্যজনিত কারণে বন বিলুপ্ত হচ্ছে। গৃহপালিত প্রাণীকে বনে ঘাস গ্রহণের লক্ষ্যে পাঠানোয় রোগ ছড়িয়ে তাদের মাঝে সংক্রমিত হচ্ছে।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮

জোনাকি পোকা।

রাতের আকাশে যেভাবে মিটমিট করে তারা জ্বলতে থাকে , ঠিক তেমনই পৃথিবীর বুকে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা ছোট্ট পোকাটির নাম জোনাকি পোকা। শহরের আলোয় এই সুন্দর পোকাটি নজরে না পড়লেও গ্রামে রাতের বেলা অসংখ্য জোনাকি পোকা দেখা যায়। মনে হয় রাতের আকাশের তারা মাঠের ওপর নেমে এসেছে। জোনাকি পোকা ইংরেজিতে যার নাম  Fire Fly । 




Insecta পরিবারের একটি গুবরে পোকার বর্গ হল Coleoptera এই বর্গের পাখাওয়ালা গুবরে পোকা যাদেরকে সাধারণভাবে জোনাকি পোকা বলা হয় ।  দের জীবনকাল শুধুমাত্র ১ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ একটি জোনাকি পোকা খুব বেশি হলে মাত্র ৩ সপ্তাহ আলো জ্বেলে দিতে পারে পৃথিবীর বুকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই জোনাকি পোকার দেহে আলো জ্বলে কিভাবে? এতো ছোট্ট একটি প্রাণীর দেহে আলোর ব্যবস্থা হয় কিভাবে?জোনাকি পোকার দেহ থেকে আলো বিচ্ছুরণের মূল মাধ্যম হলো লুসিফারিন (luciferin) নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ।কারন তারা জৈব রাসায়নিক ব্যবস্থায় নিজের শরীর থেকে আলো উৎপন্ন করে। এরা এই আলো দ্বারা যৌন মিলন ঘটানো বা শিকারের উদ্দেশ্যে জ্বেলে থাকে। এরা কোল্ড লাইট বা নীলাভ আলো উৎপন্ন করে কোন আল্ট্রাভায়োলেট বা ইনফ্রারেড তরঙ্গ ছাড়া।  এই আলো আসে  লুসিফারিন ,  অক্সিজেন  ATP এর সংমিশ্রণে লুসিফারেজ  দ্বারা অনুঘটিত জারণ  থেকে।রাতের অন্ধকারে এদের তারার মত মিটমিট করতে দেখা যায়। এরা সমবেতভাবে এক ছন্দে মিটমিট করতে দেখা যায়। এরা সমবেতভাবে এক ছন্দে মিটমিট করতে পারে।


                                                  চিত্রঃ লুসিফারিন 

এই আলোর রং হলুদ, সবুজ বা ফিকে লাল হতে পারে। আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হল ৫১০ থেকে ৬৭০ ন্যানোমিটার।প্রায় ২০০০ জোনাকির প্রজাতি পাওয়া গেছে গ্রীষ্ম এবং নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের এলাকায়। অনেকেই ভেজা, কাঠ আছে এমন এলাকা বা ডোবা জাতীয় এলাকায় থাকে । যেখানে তাদের লার্ভা বেচে থাকার অনেক খাদ্য পায়। তাদের ছানা বা কীটগুলো থেকেও আলো নির্গত হয় এদের গ্লোওয়ার্ম বলা হয়। আমেরিকায় এই গ্লোওয়ার্মকে Phengodidae  বলা হয়। অনেক প্রজাতিতেই নারী পুরুষ উভয় পতঙ্গ উড়তে পারে, কিন্তু কিছু প্রজাতির স্ত্রীরা উড়তে অক্ষম । আমাদের দেশে শুধুমাত্র সবুজ আলোর জোনাকি পোকা দেখা যায় , তবে পৃথিবীর অনান্য দেশে  লাল ও সবুজ আলোর জোনাকি পোকা দেখা যায়
তথ্যসূত্র ঃ Wikipedia , priyo.com 
 ছবিগুলো Internet থেকে নেওয়া হয়েছে ।

রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮

মাইটোকন্ড্রিয়া

মাইটোকন্ড্রিয়াঃ 
আসিফ আহমেদ
মাইটোকন্ড্রিয়া (ইংরেজিMitochondria) এক প্রকার কোষীয় অঙ্গানু, যা সুকেন্দ্রিক কোষে পাওয়া যায়। মাই‌টোক‌ন্ড্রিয়াকে কোষের শ‌ক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউস বলা হয়।
আবিষ্কারঃ
মাইটোকন্ড্রিয়ার আবিস্কার নিয়ে মতভেদ আছে। একটি মতে, বিজ্ঞানী অল্টম্যান ১৮৯৪ সালে ইহা আবিষ্কার করেন। আবার কারও মতে, গ্রিক বিজ্ঞানী সি. বেন্ডা ১৮৯৮ সালে মাইটোকন্ড্রিয়া আবিস্কার করেন। এন্ডোসিম্বায়োটিক থিওরী অনুযায়ী মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড বহু আগে মুক্তজীবি ব্যাক্টেরিয়া ছিল। যারা এন্ডোসিম্বায়োন্ট হিসেবে অন্য কোষের মধ্যে ঢুকে পরে এবং একসময় কোষেরই অংশ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের ধারনা, মাইটোকন্ড্রিয়া এসেছে প্রোটিওব্যাক্টেরিয়া থেকে এবং প্লাস্টিড এসেছে সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থেকে! এর জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক প্রমান দাড় করিয়েছেন। এগুলো থেকে বুঝা যায় বুঝা যায় যে মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড ব্যাক্টেরিয়া থেকে এসেছে। এর মধ্যে কয়েকটা এরকমঃ
·         ১) ব্যাক্টেরিয়ার মেমব্রেনের সাথে এই অঙ্গানুগুলোর মেমব্রেনের অনেক মিল রয়েছে।
·         ২) নতুন মাইটোকন্ড্রিয়া অথবা প্লাস্টিড যেই প্রক্রিয়ায়  আসে, ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রেও এমন ঘটে যাকে বলে বাইনারি ফিশন। এটা এক ধরনের অযৌন প্রজনন।
·         ৩) এরা যে ধরনের রাইবোজম(70S) বহন করে, ব্যাক্টেরিয়াতেও তা রয়েছে।
·         ৪) ব্যাক্টেরিয়ার বাহিরের মেমব্রেনে পোরিননামের এক ধরনের ট্রান্সপোর্ট প্রোটিন পাওয়া যায়, যা মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিডের বাহিরের মেমব্রেনেও রয়েছে।
·         ৫) যদি কোষের থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া অথবা ক্লোরোপ্লাস্ট সরিয়ে ফেলা হয়, কোষের ভেতর তারা আবার তৈরি হয়না।
·         ৬) তবে সবচেয়ে আকর্ষনীয় যেটা তা হল ডিএনএ। মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড উভয়েরই নিজস্ব ডিএনএ রয়েছে যা সংস্লিষ্ট ব্যাক্টেরিয়ার সাথে তুলনা করলে বিশাল মিল পাওয়া যায়।

অবস্থানঃ

লোহিত রক্ত কণিকা এবং সীভনল ব্যতীত সকল প্রকার শক্তিউৎপাদী কোষেই মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে ।

আয়তন ও সংখ্যা


·         আকার ভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার আয়তন বিভিন্ন রকম।বৃত্তাকার মাইট্রোকন্ড্রিয়ার ব্যাস ০.২ µm থেকে ২ µmসূত্রাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৪০ µm থেকে ৭০ µmদন্ডাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৯ µm  এবং প্রস্থ ০.৫ µm হতে পারে।
·         সাধারণত প্রতি কোষে এর সংখ্যা ৩০০-৪০০'র মত থাকে। যকৃৎ কোষে ১০০০ বা ততোধিক থাকে।

 

বৃদ্ধিঃ

বিভাজনের মাধ্যমে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মাইটোকন্ড্রিয়াতে তার ব্যাকটেরিয়া পূর্বপুরুষের মত ডিএনএ রক্ষনাবেক্ষনের যন্ত্রপাতি থাকেনা। যার ফলে এতে খুব দ্রুত মিউটেশন ঘটে। একটা মাইটোকন্ড্রিয়াতে একই জিনোমের কয়েকশ কপি থাকে, আবার একটি কোষে কয়েকশ মাইটোকন্ড্রিয়া থাকতে পারে। প্রতি মুহুর্তেই এই মিউটেশনের ফলে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএর বৈচিত্র্য পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা একাধিক মাইটোকন্ড্রিয়াল ভেরিয়েশন নিয়ে জন্মাই, যেই ভেরিয়েশন নিষেকের সময় ডিম্বকে তৈরি হয়। বিভিন্ন মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম মৌলিক কোষীয় ক্রিয়া গুলোকে প্রভাবিত করে বিভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে। স্কট উইলিয়াম এবং তার দল কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের দশ ধরনের টিস্যু থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া সংগ্রহ করে দেখেন যে প্রতি টিস্যুতে মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমে নির্দিষ্ট কিছু মিউটেশন ঘটেছে যা ব্যাক্তিভেদে খুব একটা পার্থক্য দেখায়নি। বিভিন্ন ধরনের কোষের ব্যাতিক্রমি চাহিদা পূরনের জন্য এই মিউটেশনগুলো ঘটছে ।




মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠনঃ
 মাইটোকন্ড্রিয়া দুটি এককপর্দা দিয়ে গঠিত,যাদের প্রত্যেকটির বেধ ৬০Åভিতরেরটিকে অন্তঃআবরণী(Inner Membrane)এবং বাইরেরটিকে বহিরাবরণী(Outer Membrane)বলা হয়। দুটি এককপর্দার মধ্যবর্তী স্থানকে পেরিমাইটোকন্ড্রিয়াল স্পেস (৬০-৯০Å) বলে। প্রতিটি এককপর্দা লাইপোপ্রোটিন(P-L-P)নির্মিত। অন্তঃপর্দা ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে যে বিভেদক প্রাচীর সৃষ্টি করে তাকে ক্রিস্টি(Cristae) বলে। অন্তঃপর্দার ভিতরে অর্ধতরল ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স বর্তমান।এই ধাত্রে বিভিন্ন প্রকার এনজাইম বিদ্যমান। বহিঃপর্দার বহিঃগাত্রকে C-তল (Cytoplasmic Surface)এবং অভ্যন্তরীণ তলকে M-তল(Matrix surface)বলে। ক্রিস্টির গাত্রে অসংখ্য সবৃন্তক কণা বর্তমান,একে অক্সিজোম বা F1 বা ফার্নান্ডেজ-মোরান অধঃএকক বলে। বর্তমানে জানা গেছে,অক্সিজোম ৫টি অধঃএককের সমন্বয়ে গঠিত।এদের 3α,3β,1γ,1Δ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এই অধঃএককগুলি শ্বাস  এনজাইমে পূর্ণ থাকে। অক্সিজোমের গোলাকার মস্তকের ব্যাস ৭৫-১০০Å,বৃন্তটি লম্বাকার অংশ ৫০Å দীর্ঘ এবং চওড়ায় ৩৫-৪০Åআয়তাকার বেস(Base বা F0 subunit)১১৫Å*৪৫Å আয়তনের বেস।প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ায় অক্সিজোমের সংখ্যা ১০০০০-১০০০০০।
প্রতিটি অক্সিজোম পরস্পর থেকে ১০০Å দূরে থাকে। বহিঃপর্দার বহিঃগাত্রে কিছু অবৃন্তক কণা বর্তমান,এদের পারসনের অধঃএকক বলে। মাইটোকন্ড্রিয়ার ম্যাট্রিক্সে ৩-৫টি চক্রাকার DNA বর্তমান,একে মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA বলে। ম্যাট্রিক্সে মাঝেমাঝে গুচ্ছাকারে ৫৫S প্রকৃতির রাইবোজোম  বিদ্যমান,এদের মিটোরাইবোজোম বলে।

কাজঃ

·         সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় পর্যায় ক্রেবস চক্র ও ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইনের বিক্রিয়া সমূহ মাইটোকন্ড্রিয়াতে সংঘটিত হয়। এর মাধ্যমে ATP(Adenosine Triphosphate)অণু সংশ্লেষ করে যা সকল শক্তির উৎস বলে । এজন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে  Powerhouse of Cell বা কোষের শক্তিঘর বলে।
·         ইহা লেসিথিন এবং ফসফাটাইডাইল-ইথানলামিন নামক দুটি ফ্যাট সংশ্লেষে সহায়তা করে। ইহা ফ্যাটি অ্যাসিড বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
·         ইহা জীবদেহে জৈবদ্যুতি (Bio luminescence)ঘটায়। অর্থাৎ মাইটোকন্ড্রিয়া জোনাকির দেহে লুসিফেরন নামক প্রোটিনকে লুসিফেরেজ নামক উৎসেচক দ্বারা জারিত করে ফসফরাসের বিয়োজন ঘটায় যা আলোক সৃষ্টি করে। এখানে হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিনের হিম (Haem)অংশ সংশ্লেষিত হয়।
·         কিছু পরিমাণ RNA DNA উৎপন্ন করতে পারে।
·         কোষের প্রয়োজনে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটিয়ে কাজে সহায়তা করে।
·         প্রাণিকোষে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
·         মাইটোকন্ড্রিয়া স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করে।
·         মাইটকন্ড্রিয়া আমাদের কোষের জন্য শক্তি তৈরির সাথে সাথে এক ধরনের আয়নিত অণুর সৃষ্ট করে যাকে ফ্রী রেডিকেল বলে। তারা স্টেম সেল-এর পরিনত হওয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণে নিরাপত্তা প্রতিক্রিয়া তৈরিতেও কাজ করে।


 

 

তথ্যসূত্রঃ

  • wikipedia
  • ক্যাটরিন হেঞ্জেল ও উইলিয়াম মার্টিন (১৩ নভেম্বর ২০০৩)। "Evolutionary biology: Essence of mitochondria"
  • গাজী আজমল,সফিউর রহমান। উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান(প্রথম পত্র)গাজী পাবলিশার্স। পৃ: ১৪।
  •  আবুল হাসান। উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান (১ম পত্র)হাসান বুক হাউস। পৃ: ৯১।
  •  The powerful aliens that lurk within you by Garry Hamilton, New Scientist
  •  "Mitochondrion – much more than an energy converter"British Society for Cell Biology। 



মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১৮

কোষ বিভাজন

প্রতিটি জীবের দেহ কোষ দিয়ে গঠিত। এক কোষী জীবগুলো কোষ বিভাজনের দ্বারা একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি কোষে বিভক্ত হয় এবং এভাবে বংশবৃদ্ধি করে। বহুকোষী জীবদের দেহ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে। ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর বহুকোষী জীবদের জীবন শুরু হয় একটি মাত্র কোষ থেকে। নিষিক্ত ডিম্বাণু অর্থাৎ এককোষী জাইগোট ক্রমাগত বিভাজিত হয়ে সৃষ্টি করে লক্ষ লক্ষ কোষ নিয়ে গঠিত বিশাল দেহ।
কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ
জীবদেহে তিন ধরনের কোষ বিভাজন দেখা যায়, যথা- (১) অ্যামাইটোসিস (২) মাইটোসিস এবং (৩) মিয়োসিস।
অ্যামাইটোসিস : এই ধরনের কোষ বিভাজন ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ছত্রাক, অ্যামিবা ইত্যাদি এককোষী জীবে হয়। এককোষী জীবগুলো অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে বংশবৃদ্ধি করে। এ ধরনের কোষ বিভাজনে নিউক্লিয়াসটি ডাম্বেলের আকার ধারণ করে এবং প্রায় মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। এর সাথে সাথে সাইটোপ্লাজম ও মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে দুটি কোষে পরিণত হয়। এ ধরনের বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাই একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।

মাইটোসিস
যে বিভাজনে প্রকৃত কোষের নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোজোম উভয়ই একবার করে বিভক্ত হয় তাকে মাইটোসিস বলে ।। মাইটোসিস কোষ বিভাজনকে সমিকরনিক বিভাজন বলা হয় । কারণ এতে অপত্য কোষ হুবুহু মাতৃ কোষের মত হয়ে থাকে । প্রাণীর দেহকোষে (সোমাটিক সেল) মাইটোসিস কোষ বিভাজন হয়। এছাড়াও উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চল ও পুশপমুকুলে এ বিভাজন দেখা যায়। হ্যাপ্লয়েড জীবের জনন মাতৃকোষেও মাইটোসিস হয়ে থাকে। মাইটোসিস বিভাজনে উৎপন্ন অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা হুবুহু মাতৃকোষের অনুরুপ হয়, ফলে অপত্য কোষের বৈশিষ্ট্য অভিন্ন । মাইটোসিস কোষ বিভাজন দুই অংশে বিভক্ত - ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াসের বিভাজন ও সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ।উন্নত শ্রেণির প্রাণীর ও উদ্ভিদের দেহ কোষ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়।
মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য

১. মাইটোসিস কোষ বিভাজন দেহকোষের এক ধরনের বিভাজন পদ্ধতি।

২. এ প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি একবার মাত্র বিভাজিত হয়।
৩. মাতৃকোষটি বিভাজিত হয়ে সমগুণ সম্পন্ন দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।
৪. এ ধরনের বিভাজনে মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের সংখ্যা এবং অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান থাকে অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে।
৫. এ ধরনের বিভাজনে প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে দুভাগে বিভক্ত হয়। ফলে সৃষ্ট নতুন কোষ দুটিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান থাকে। তাই মাইটোসিসকে ইকুয়েশনাল বা সমীকরণিক বিভাজনও বলা হয়।
মাইটোসিস কোথায় হয়?
মাইটোসিস বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবদেহের দেহকোষে ঘটে, উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের ভাজক টিস্যু যেমন- কাণ্ড, মূলের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুল ও ভ্রূণমূল, বর্ধনশীল পাতা, মুকুল ইত্যাদিতে এ রকম বিভাজন দেখা যায়।

মাইটোসিস কোষ বিভাজন পদ্ধতি ঃ
মাইটোসিস বিভাজনটি দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে সাইটোপ্লাজম বিভাজন হয়। নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ- াজমের বিভাজনকে সাইটোকাইনেসিস বলে।
মাইটোসিস কোষ বিভাজন একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি তাই প্রথমে ক্যারিওকাইনেসিস অর্থ্যাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন হয়, পরিবর্তীতে সাইটোকাইনেসিস হয়। তবে ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস শুরু হওয়ার আগে কোষটির নিউক্লিয়াসকে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়। কোষটির এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ বলে। কেন্দ্রিকার বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস
বিভাজিত কোষে নিউক্লিয়াসটির একটি জটিল পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যারিওকাইনেসিস সম্পন্ন হয়। পরিবর্তনগুলো ধারাবাহিকভাবে ঘটে। বুঝার সুবিধার্থে এই পর্যায়টিকে পাঁচটি ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে।
 ধাপগুলো- ১. প্রোফেজ , ২. প্রো-মেটাফেজ, ৩. মেটাফেজ, ৪. অ্যানাফেজ ও ৫. টেলোফেজ।
প্রোফেজ :
এটি মাইটোসিস কোষ বিভাজনের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ধাপ, এ ধাপে কোষে নিম্নলিখিত ঘটনাবলি ঘটে-
১. কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়।

২. পানি বিয়োজনের ফলে নিউক্লিয়ার জালিকা ভেঙ্গে গিয়ে কতকগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক আঁকাবাঁকা সুতার মতো অংশের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে ক্রোমোজোম বলে। এরপর প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে। এগুলো সেন্ট্রোমিয়ার নামক একটি বিন্দুতে যুক্ত থাকে।

প্রো-মেটাফেজ : 
এ ধাপটি স্বল্পস্থায়ী। এ ধাপে-
১. নিউক্লিয়ার পর্দা ও নিউক্লিওলাস সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২. কোষের উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত কতকগুলো তন্তুর আবির্ভাব ঘটে। এগুলো মাকুর আকৃতি ধারণ করে তাই একে স্পিন্ডল যন্ত্র বলে।  স্পিন্ডলযন্ত্রের মধ্যভাগকে বিষুবীয় অঞ্চল বলে।
প্রাণিকোষে সেন্ট্রিওল দুটির চারিদিক থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মির মতো প্রোফেজ (প্রথমাবস্থা) প্রোফেজ (শেষাবস্থা) নিউক্লিওলাস ক্রোমোজোম অ্যাস্ট্রার রশ্মি সেন্ট্রোমিয়ার প্রাণিকোষ ক্রোমাটিড জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি ১৫ মেরুঅঞ্চল বিষুম অঞ্চল ক্রোমাটিডদ্বয় স্পন্ডল তন্তু সেন্ট্রোমিয়ার প্রাণিকোষ উ্িদ্ভদকোষ আপত্য ক্রোমোজম লুপ্তপ্রায় স্পন্ডল তন্তু মেরু অ্যাস্ট্রার রশ্মির আবির্ভাব ঘটে এবং কোষের দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছাতে স্পন্ডল তন্তু ।করে। তন্তুগুলো পর পর যুক্ত হয়ে স্পন্ডল যন্ত্র গঠন করে।
অ্যানাফেজ : এ ধাপে-
১. প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, ফলে প্রত্যেক ক্রোমাটিড একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার পায়।
২. ক্রোমাটিডগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমাটিডকে অপত্য ক্রোমোজোম বলে।
৩. এরপর ক্রোমোজোমগুলোর সাথে যুক্ত তন্তুগুলোর সংকোচনের ফলে অপত্য ক্রোমোজোমের অর্ধেক উত্তর মেরুর দিকে এবং অর্ধেক দক্ষিণ মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় ক্রোমোজোমগুলো ইংরেজি বর্ণমালারখ অথবা আকৃতি বিশিষ্ট হয়।
টেলোফেজ : এ ধাপে-
১. অপত্য ক্রোমোজোমগুলো বিপরীত মেরুতে এসে পৌছায়।
২. এরপর ক্রোমোজোমগুলোকে ঘিরে নিউক্লিয়ার পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের পুনঃ আবির্ভাব ঘটে। প্রাণিকোষে উভয় মেরুতে একটি করে সেন্ট্রিওল সৃষ্টি হয়।
৩. এ অবস্থায় ক্রোমোজোমগুলো সরু ও লম্বা আকার ধারণ করে পরস্পরের সাথে জট পাকিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন করে। এভাবে কোষের দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয় এবং ক্যারিওকাইনেসিসের সমাপ্তি ঘটে।


প্রকৃতপক্ষে টেলোফেজ দশাতেই সাইটোকাইনেসিস শুরু হয়। টেলোফেজ ধাপের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলি জমা হয় এবং পরে এরা মিলিত হয়ে কোষপ্লেট গঠন করে। মাতৃকোষ পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে কোষ প্রাচীর গঠন করে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।
প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের বিভাজনের সাথে সাথে কোষের মাঝামাঝি অংশে কোষপর্দার উভয় পাশ থেকে দুটি খাঁজ সৃষ্টি হয়। কোষপর্দার এ খাঁজ ক্রমশ ভিতরের দিকে গিয়ে নিরক্ষীয় তল বরাবরে বিস্তৃত হয়ে মিলিত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।

তথ্যসূত্র ঃ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান , উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান প্রথম প্ত্র - ড মোঃ আবুল হোসেন , Wikipedia
চিত্রগুলো নেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট থেকে ।








শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮

ডিএনএ, জিন, ক্রোমোজোম, জিনোম

 ডিএনএ, জিন, ক্রোমোজোম, জিনোম

জীববিজ্ঞানের বিষয় সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং সঠিক তথ্য জানানোর জন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
ভুল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে না দেখে কমেন্টে জানাবেন। আমি বিদ্যাদিগগজ নই। ভুল ত্রুটি দেখালে অন্যেরাসহ আমি সঠিক শিখতে পারবো।
আমরা সবাই ডিএনএ, জিন এই শব্দগুলোর সাথে কম-বেশি পরিচিত। যেমন, কোন অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় বা অপরাধী সনাক্তকরণে আমরা ডিএনএ টেস্ট করি। আবার, কোন শিশু প্রতিভাবান হলে বলি ‘বাবা-মায়ের জিন পেয়েছে।’ সাধারণ মানুষ যা বুঝে তা হলো ডিএনএ প্রতিটি মানুষের জন্য স্বতন্ত্র পরিচয় আর জিন হচ্ছে বৈশিষ্ট্য যা বংশানুক্রমে স্হানান্তরিত হয়। আবার অনেকে জিনোম শব্দটির সাথে পরিচিত যদিও অধিকাংশই বুঝে না জিনোম (বাংলা: জীবনরহস্য) কী? সম্প্রতি পাটের জিনোম উৎঘাটনের মাধ্যমে শব্দটি সাধারণের মধ্যে প্রচার পেয়েছে। যারা জীববিজ্ঞান পড়েছেন তারা ক্রোমোজোম শব্দটি জানেন, বিশেষ করে জানেন যে ছেলেতে XY এবং মেয়েতে XX ক্রোমোজোম থাকে। তবে অনেকেই জানেন না বা বুঝতে পারে না, এই চারটি শব্দই পরস্পর সম্পর্কিত।
প্রথমে একটি উদাহরণ দিচ্ছি, সেটা মনে রাখুন। ধরুন, বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স ৪৬ তলা করা হলো (কল্পনায়) এবং নাম পাল্টে রাখা হলো “জিনোম”। প্রতি তলাকে ক্রোমোজোম নাম দেয়া হলো। এখন উপরের ২৩ তলা আর নিচের ২৩ তলা একই (বা একটি তলা শুধু স্বতন্ত্র)। আলাদা ভাবে প্রতি দুই তলার মধ্যে মিল থাকার জন্য ২৩ জোড়া তলা বা ক্রোমোজোম বলুন। প্রতি তলার দোকানকে বলা হলো জিন যারা ভিন্ন ভিন্ন পণ্য বিক্রি করে/কাজ করে আর যত ইট আছে সবগুলোকে বললেন ডিএনএ। কঠিন হয়ে গেলো? তাহলে শুনুন, ইট তো ইট, ইটকে সঠিকবিন্যাসে সাজালে হয় দোকানঘর, দোকানঘর গুলো যদি একসাথে নির্দিষ্ট বিন্যাসে থাকে একটি বিশেষ জায়গায় থাকে তখন বলি ফ্লোর/তলা, সবগুলো তলা যখন একসাথে একটি ভবন তৈরি করে তখন বলি কমপ্লেক্স বা ভবন- কিন্তু এগুলো সবইতো ইট দিয়ে তৈরি। নিচের চিত্রটি(চিত্র ১) দেখুন বুঝা যায় কিনা? (অবস্হানগত বিভাগ বোঝানোর জন্য)

চিত্র ১: জিনোম থেকে ডিএনএ। ডিএনএর বিভিন্ন স্হানিক বিন্যাসের নামকরণের রূপক চিত্র।
আরেকটা প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিচ্ছি, ধরুন আপনি বাংলা ব্যাকরণ পাঠ্যপুস্তক (জিনোম) পড়ছেন। সেখানে ৪৬ টা অধ্যায় (ক্রোমোজোম) যেখানে বইয়ের শুরুর ২৩টি অধ্যায় (ক্রোমোজোম) এবং শেষের ২৩ টি অধ্যায় (ক্রোমোজোম) একই (বা একটি অধ্যায় শুধু স্বতন্ত্র)। প্রতিটি অধ্যায় অসংখ্য প্রবন্ধাংশ (জিন) বিশেষ বিশেষ ঘটনা বর্ণনা করছে। আর সম্পূর্ণ ব্যাকরণ বই লিখা হয়েছে অক্ষর দিয়ে। (চারটি সংজ্ঞা পরস্পর সম্পর্কিত বোঝানোর জন্য)
ডিএনএ:
ডিএনএ হচ্ছে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক সিড। এটি বংশগতির ধারক ও বাহক। অর্থাৎ পিতামাতা থেকে বৈশিষ্ট্য ডিএনএ ধারণ ও বহন করে। একই ভাবে, পিতামাতাও তাদের ডিএনএতে তাদের পিতামাতার বৈশিষ্ট্য ধারণ ও বহন করে। তাই এইভাবে একজন মানুষের ডিএনএ এর তথ্য থেকে তার পূর্বপুরুষ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রজন্মান্তরে একই পূর্বপুরুষ থেকে বংশধররা আস্তে আস্তে দূরসম্পর্ক হয়ে যায়; আপনার নানীর চাচাতো বোনের মেয়ের মেয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক হচ্ছে দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আপনাদের দুজনের ডিএনএর বিন্যাসপাঠ (সিকুয়েন্সিং) করলে দেখা যাবে, আপনার সাথে আপনার ভাইবোনের সাথে সবচেয়ে মিল, তারপর হচ্ছে আপনার চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো-খালাতো ভাই-বোনদের মিল, তারপরে দেখা যাবে আপনার ঐ দূর সম্পর্কের বোনের সাথে মিল। এখন এই মিল আসলে কিভাবে বিজ্ঞানীরা জানে বা আসলে ডিএনএর মিল কি বুঝায়? বিজ্ঞানীরা ডিএনএ বিন্যাস বের করে এবং কম্পিউটারের বিশেষ সফটওয়ার তাদের মিল বের করতে সাহায্য করে (জিনোম সিকুয়েন্সিং এর কথা বলছি)। সেখান থেকে তারা কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক বিন্যাস জনসংখ্যায় ভিন্নভাবে অবস্হান করে জানে, এবং শুধু সেগুলোর বিন্যাস থেকে নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারে কে কার সাথে কিভাবে সম্পর্কিত।
ডিএনএ চারটি গাঠনিক একক

চিত্র ২: ডিএনএ ।
(নাইট্রোজেনযুক্ত নিউক্লিক যৌগ/ক্ষার) দিয়ে তৈরি দ্বৈত-সর্পিলাকার (ডাবল-হেলিক্স) সূত্রাকার পলিমার। পলিমার হচ্ছে একই রকম যৌগ একক দিয়ে তৈরি লম্বা যৌগ। ডিএনএর চারটি গাঠনিক একক (নিউক্লিওটাইড) হচ্ছে এডেনিন (A), সাইটোসিন (C), গুয়ানিন (G) এবং থাইমিন (T)। এই চারটি অক্ষরের ভিন্ন ভিন্ন বিন্যাসে ডিএনএতে বংশগতি তথ্য সংরক্ষিত থাকে। ইংরেজীর যেমন ২৬ টি অক্ষর তেমনি বংশগতির মূল বর্ণমালায় অক্ষর চারটি। এখন এই অক্ষর আবার একটি আরেকটির সাথে জোড় বাধে। যেমন A জোড় বাধে T; C জোড় বাধে G (রাসায়নিক বন্ধন)। এরকম জোড়কে বলে বেইস পেয়ার। মানবদেহের একটি কোষের ডিএনএতে ৩.২ বিলিয়ন বেইসপেয়ার আছে। এই বিলিয়নেই আমাদের তথ্য লুকিয়ে আছে।
মজার তথ্য হলো, পনার দেহের সব কোষ থেকে পাওয়া ডিএনএ কে যদি সোজা করা হয় (কুণ্ডলী এবং প্যাঁচ খুলে দেয়া হয় ) তবে তার দৈর্ঘ্য হবে সূর্য থেকে পৃথিবীতে ৬৭ বার আসা যাওয়ার সমান। আর একটি কোষে থাকা ডিএনএর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই মিটারের কাছাকাছি, যেখানে কোষে থাকা অবস্হায় পুরো ডিএনএ প্রায় ৬ মাইক্রোন জায়গার মধ্যে থাকে। মাইক্রোন হচ্ছে এক মিটারে এক মিলিয়ন বা দশ লাখ ভাগের এক ভাগ। আপনি ভাবছেন, কিভাবে ২ মিটার লম্বা একটি বস্তু কিভাবে এক মিটারের এক মিলিয়ন ভাগের এক ভাগের ছয় গুণ জায়গায় থাকে। গালগপ্প মারছি?

চিত্র ৩: মরিচবাতি দিয়ে আলোকসজ্জা। এখানে ব্যবহৃত সব মরিচবাতি এক সাথে এক ঘরের কোণে রাখা যাবে।
আবার চলুন ভবনে যাই। আপনি ভবনের ছাদে চলে যান আর আপনার হাতে আমি একটি সুঁতোর বড় গুটি দিয়ে দিলাম বা ঘুড়ির নাটাই। ছাদের কোন পিলারে সুতোর এক কোণা বেঁধে ছেড়ে দিন। সুতো দেখবেন হয়তো পুরো বিল্ডিং এর দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে মাটিতে চলে গেছে। অথচ এই সুঁতোর বড় গুটি বা ঘুড়ির নাটাই ঘরের এক চিলতে জায়গায় খুব সুন্দর ভাবে থাকবে। চিত্র ৩ এ দেখুন একটি ভবনে মরিচ বাতি দিয়ে রঙবেরঙে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।


চিত্র ৪: ডিএনএর সুপারকয়েলিং।
মরিচবাতি পুরো ভবনকেই ঘিরে রেখেছে। এই কাজে ব্যবহৃত সব মরিচবাতিকে যদি একত্রিত করে, গুছিয়ে সুন্দর করে বেঁধে রাখা হয় তবে তা ঐ ভবনের ছোট্ট একটি ঘরের বড় এক বাক্সে সুন্দর করে রাখা যাবে। ডিএনএর ব্যাপারটাও এই রকম। একে বলা হয় সুপারকয়েলিং। বাংলায় প্যাঁচ বেশি থাকলে লোকে বলে ‘জিলাপির প্যাঁচ’ আর জীববিজ্ঞানে আমরা বলি ‘ডিএনএর প্যাঁচ’। সুপারকয়েলিং অন্য নোটে ব্যাখ্যা করবো। চিত্র ৪ এ দেখতে পাচ্ছেন ডিএনএর সুপার কয়েলিং। এই ডিএনএর কোডিং অঞ্চল থেকে ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে এমআরএনএ হয় যা পরে ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে প্রোটিন তৈরি করে (চিত্র ৫)।

চিত্র ৫: জীববিজ্ঞানে সেন্ট্রাল ডগমা বা প্রধান স্বীকার্য। সেন্ট্রাল ডগমানুযায়ী ডিএনএন থেকে ট্রান্সক্রিপশনে আরএনএ হয়। আরএন থেকে ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে ফোল্ডিং শেষে প্রোটিন তৈরি হয়।

উপরের অংশ বুঝলে জিন, ক্রোমোজোম এবং জিনোম সহজেই বুঝতে পারবেন।
জিন:
জিন কে আলাদীনের জ্বিনের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না। জিন হচ্ছে বংশগতির বাস্তব এবং কার্যকরী একক।

চিত্র ৬: ক্রোমোজোমের দুটি জিনের অবস্হান দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করছে।
একটি জিন একটি প্রোটিন তৈরি করার তথ্য (coding for mRNA or functional RNA) এবং উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্হা থাকে। আপনার ডিএনএকে যদি সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা হয় তবে জিন হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট স্হানে অবস্হৃত ডিএনএর নির্দিষ্ট বিন্যাস যা বংশগতির একক। জিনের নামকরণের সময় এর অবস্হান কোথায় তা সংঙ্গায়িত করা হয়। অর্থাৎ কোন ক্রোমোজোমের কোন বাহুর কোন অঞ্চলের কত নাম্বার বেসপেয়ার থেকে কত বেস পেয়ার সেটা বলা হয়।
এখন হয়তো দুটি জিনের মধ্যে একটি হয়তো চোখের আইরিশের রঙের জন্য দায়ী আরেকটি চুলের রঙের জন্য (চিত্র ৬)। এই দুটি জিন ভিন্ন কাজ করলেও তাদের অবস্হান ডিএনএর ভিন্ন জায়গায় এবং ভিন্ন বিন্যাস। প্রতিটি জিনের দুটি করে কপি আমাদের একটি কোষে থাকে। দুটি জিনের একটি পাই বাবা থেকে আরেকটি মা থেকে। এখন প্রতিটি মানুষের জিন বিন্যাস একইরকম হয়, তবে কিছু মানুষের মধ্যে এই বিন্যাসের কয়কটি স্হানে একই রকম পরিবর্তন থাকতে পারে। যখন এধরনের পরিবর্তন জনসংখ্যা ১% এর বেশিরূপে বর্তমান থাকে তাকে পলিমরফিজম বলে।

চিত্র ৭: সিঙ্গেল নিউক্লিউটাইড পলিমর্ফিজম।
নিচে তিনজন মানুষের একটি জিনের ডিএনএর বিন্যাসের চিত্রে-৭ দেখতে পাচ্ছেন শুধু একটি জায়গাতেই ভিন্নতা পরিলক্ষিত। এই ভিন্নতা যদি জনসংখ্যায় ১% এর বেশি বর্তমান থাকে তবে তা পলিমরফিজম, এই উদাহরণে এটাক বলে সিঙ্গেল নিউক্লিউটাইড পলিমরফিজন (এসএনপি বা সংক্ষেপে স্নিপ)”। ধরুন, ঐ অবস্হানে থাকা G থাকা বিন্যাস জনসংখ্যায় ১% এর কম, তখন এটাকে মিউটেশন বলে। একটি জিনের ভিন্ন বিন্যাস থাকা অংশগুলোকে একটি ‘এলিল’ বলা হয়। আবার অনেকসময় অনেকগুলো এসএনপি সবসময় একসাথে একই বিন্যাস থাকে এবং বংশানুক্রমে বাহিত হয়। এরকম বিন্যাস হচ্ছে জিনোটাইপ। মানুষের জিনের সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার থেকে কিছু বেশি, যেখানে ভুট্টা গাছের জিনের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারের মতো। সুতরাং জিনের সংখ্যা বেশি থাকা মানেই আপনি উন্নত প্রাণী তা বোঝায় না। আগেই বলেছি ডিএনএ প্যাঁচানো। এই প্যাঁচানো অবস্হান হিস্টোন প্রোটিন সাহায্যে উচ্চতর কুন্ডলি আকার ধারণ করে। সেই কুন্ডলি গুলো আবার গুচ্ছ আকারে নতুন প্যাঁচ তৈরি করে। কোষ যখন বিভাজনের সময় তরল পদার্থ বের করে দেয় তখন এই প্যাঁচানো ডিএনএগুলো ২৩ জোড়া (৪৬ টি) আলাদা আকৃতি ধারণ করে। এই আকৃতিগুলোকে বলে ক্রোমোজোম। মলিক্যুলার বায়োলজিস্টরা এদেরকে আলাদা ভাবে সনাক্তকরার পদ্ধতি বের করেছে, একে বলে ক্যারিওটাইপিং। এখন এই আকৃতিগুলো ভিন্ন এবং একই প্রাণীতে একই সংখ্যক ও একই আকৃতির। শুধু তাই না, এই ক্রোমোজোমের বাহুর মতো অংশগুলোর নির্দিষ্ট স্হানে শুধু নির্দিষ্ট জিনই খুঁজে পাবেন। এরকম নির্দিষ্ট স্হানকে “লোকাস” বলে।

চিত্র ৮: একটি ক্রোমোজোম।
ক্রোমোজোম/ক্রোমোসোম:

চিত্র ৯: কোষে ক্রোমোজোমের অবস্হান।
ক্রোমোজোম হচ্ছে সুসজ্জিত ডিএনএর আকৃতি যা বংশগতির তথ্য বহন করে এবং কোষ বিভাজনের সময় দৃশ্যমান(সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্রে)। ক্রোমোজোম একটি লম্বা ডিএনএ(কোষের সম্পূর্ণ ডিএনএ নয়) ও প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত সজ্জিত আকৃতি। মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে, যার মধ্যে ২২ জোড়া অটোসোম ও এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম। এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম মানুষের লিঙ্গ নির্ণয় করে। ছেলেতে XY এবং মেয়েতে XX ক্রোমোজোম থাকে। (কিভাবে ছেলে ও মেয়ে হয় সেটা আরেক নোটে বলবো) এই ৪৬ জোড়া ক্রোমোজোম কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্হান করে (চিত্র ৯)। এই ৪৬ জোড়া ক্রোমোজোমের সকল তথ্যকে একসাথে জিনোম বলে।
জিনোম:
 জিনোম হচ্ছে একটি প্রাণীতে থাকা সকল বংশগতির তথ্যের সম্পূর্ণ সেট। জিনোম একটি প্রাণীর সকল বংশগতির তথ্য বহন করে। ইউক্যারিওট বা প্রকৃতকোষী (ঝিল্লিবদ্ধ নিউক্লিয়াস) প্রাণীতে জিনোম নিউক্লিয়াসে থাকে। জিনোম নিউক্লিয়াসে লম্বা ডিএনএর বিশেষ সজ্জিত আকৃতিতে থাকে যাকে বলে ক্রোমোজোম। মানবদেহে ৪৬ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। ক্রোমোজোমের ডে নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট বিন্যাস প্রাণীর জন্য আরএনএ ও প্রোটিন তৈরি করে তাকে জিন বলে। জিন ডিএনএ দিয়ে তৈরি। ডিএনএ নিউক্লিওটাইড দিয়ে তৈরি। (মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ কথা সহজে বোঝানোর জন্য উল্লেখ করা হলো না।)
বড় পোস্ট, খেই হারিয়ে ফেললে চলুন, আবার ছোট্ট একটা ছবিতে আবার মনে করার চেষ্টা করি। প্রাণী কোষ দিয়ে তৈরি, কোষে থাকে নিউক্লিয়াস, নিউক্লিয়াসে থাকা সকল বংশগতির তথ্য হচ্ছে জিনোম, জিনোম নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোম নামক আকৃতিতে থাকে, ক্রোমোজোমে অসংখ্য জিন থাকে, জিন ডিএনএ দিয়ে তৈরি, ডিএনএ নিউক্লিওটাইড দিয়ে তৈরি।

চিত্র ১০: আসুন শেষে আরেকবার মগজ ঝালাই করে নিই। কোষে থাকে জিনোম, জিনোম থাকে ক্রোমাজোমের আকৃতিতে, ক্রোমোজোমে থাকে জিন, জিন ডিএনএ দিয়ে তৈরি।
পুনশ্চ:
  • ১. সহজভাবে বোঝানোর জন্য সহজ ভাষায় লিখার চেষ্টা করেছি। অনেক সায়েন্টিফিক টার্ম বাদ দিয়েছি। যথাসম্ভব বাংলায় লিখার চেষ্টা করেছি।
  • ২. আরো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে করতে পারেন বা মেসেজ জানাতে পারেন। জানার জন্য কোন লজ্জা বা ভয় থাকা উচিত না।
  • ৩. বড় পোষ্টের জন্য দু:খিত।
  • ৪. ভুল-ত্রুটি কমেন্টে উল্লেখ করলে খুবই খুশি হবো।
  • ৫. ব্যকরণগত ত্রুটি এবং ভুল শব্দের প্রয়োগ থাকতে পারে।
রেফারেন্স/লিংক/সূত্রসমূহ:
  1. ডিএনএর দৈর্ঘ্য সম্পর্কিত: http://www.sciencefocus.com/qa/how-… ; http://scienceline.ucsb.edu/getkey…. ; http://hypertextbook.com/facts/1998…
  2. নেচারের এই লিংকে বিভিন্ন সংজ্ঞাগুলো পাবেন: http://www.nature.com/scitable/defi…
  3. এনআইএইচ এর এই লিংকে সহজ সংজ্ঞা পাবেন: https://ghr.nlm.nih.gov/primer#basi…
  4. এনআইএইচ এর এই লিংকে বিস্তারিত পাবেন: https://www.genome.gov/26524120/chr…
  5. সংজ্ঞাগুলো উইকিপেডিয়া লিংক: https://en.wikipedia.org/wiki/DNA ; https://en.wikipedia.org/wiki/Genehttps://en.wikipedia.org/wiki/Chrom…https://en.wikipedia.org/wiki/Genom… ;https://en.wikipedia.org/wiki/Singl…
  6. ছবিগুলো (প্রথমটি বাদে) ইন্টারনেট অবলম্বনে।