মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯

বনের রাজা

বনের সবচেয়ে লম্বা প্রাণী জিরাফ যার উচ্চতা ঊনিশ ফুট পর্যন্ত হতে পারে যেখানে বনের রাজা সিংহের উচ্চতা মাত্র চার ফুট!
বনের সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতির ওজন যেখানে আঠারো ঊনিশ হাজার কেজি সেখানে বনের রাজা সিংহের ওজন মাত্র একশ থেকে দুইশো কেজি পর্যন্ত হয়!
বনের সবচেয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন প্রাণী চিতা বাঘ যে সত্তর মাইল বেগে দৌড়াতে পারে সেখানে সিংহ শরীরের ওজনের কারণে পাঞ্চাশ মাইল বেগ উঠাতে হিমশিম খেতে থাকে!
বনের বুদ্ধিজীবী শিম্পাঞ্জির মতো সিংহের এতো বুদ্ধি টুদ্ধিও নেই!
বনের অন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে হালের পিঁপড়াও সিংহের চেয়ে কর্মঠ কারণ সিংহরা অলস প্রকৃতির হয়!
অবসর সময়ে অলস হয়ে ঘুমিয়ে থাকা সিংহের আরেকটি আর্ট!
তবুও সিংহ বনের রাজা কারণ সিংহের রয়েছে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব! সে একান্ত ক্ষুধা না লাগলে অন্য প্রাণীদের আক্রমণ করেনা!
সিংহ এমন এক প্রকৃতির প্রাণী যে কখনো বনের অন্য কোন প্রাণীকে পরোয়া করে চলতে শিখেনি!
প্যানথেরাগণের চারটি বৃহৎ বিড়ালের মধ্যে সিংহ একটি অথচ একজনের আচরণ হালুম! হালুম! রাজার মতো অন্যজনের ম্যাও! ম্যাও! প্রজার মতো!
সিংহরা নিজের থেকেও এলাকা এবং পরিবার পরিজন রক্ষার্থে প্রয়োজনে সহিংস হয়ে উঠে!
গবেষণায় দেখা গেছে বনের অন্যান্য প্রাণীরাও সিংহকে সমীহ করে চলে তার মনোভাব কিংবা এটিচ্যুয়েডের কারণে সে যেটা নিজের মধ্যে লালন করে চলে যে আমিই সেরা!
সিংহ যদি ভাবতো আমি লম্বা না বেটে, বড় না ছোট, কর্মঠ না বরং অলস, দ্রুত গতির না কম গতি সম্পন্ন, বুদ্ধিমান না বরং বোকা তাহলে সে কখনো বনের রাজা ট্যাগ পেতো না!
প্রায় একশো বর্গকিলোমিটার রাজ্যে এক একটা সিংহ আধিপত্য করে থাকে ভাবটা এমন এটা তো আমার অঞ্চল!
রাজকীয় ভঙ্গি, দৃঢ় পদচারনা, কঠিন মনোভাব থাকা সত্ত্বেও শিকার করার ক্ষেত্রে সিংহের সফলতার হার মাত্র সতের আঠারো পার্সেন্ট মানে প্রতি দশবারে আট বার সে ব্যর্থ হয় তবুও সে দমে যায় না অদম্য বলেই বনের রাজা খ্যাতি লাভ করেছে!
সিংহ নিঃশব্দে শিকার করে জীবনের প্রয়োজনে তার তখন এতো হুংকার ঝংকার থাকে না!
আত্মরক্ষা কিংবা ক্ষুধার কারণ ছাড়া সে অকারণে অন্য প্রাণী হত্যা করে না!
প্রকৃতিতে সিংহ তার পরিবারের খেয়াল রাখে শেয়ার কেয়ারের মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে,
সিংহ সব সময় বিপদে আপদে একে অপরের পাশে থাকে!
বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী প্রাণী সিংহ,
সিংহের তো তবুও শরীর সামর্থ্য কিছুতো আছে সে বনে থাকে নখ আছে ভাব থাকে
কিন্তু,
এই যে মশাটি এখন কামড় দিয়ে গেলো সে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী প্রাণী যে জীবন ধারণের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষের সাথে খেলে চলে কিন্তু তার কোন কিছু নেই শুধু বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছাড়া!
যারা বলে আমার তো মামা নেই, বাবা নেই, টাকা নেই, ক্ষমতা নেই, সামর্থ্য নেই, এটা নেই ওটা নেই সেটা নেই তাদের জন্য মশা হলো সবচেয়ে বড় মোটিভেশন!
মশারা আড়াই দিন বাঁচে তবুও বেঁচে থাকার জন্য জীবন বাজি রাখে........!

মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯

হামিং বার্ড(Smallest bird in the world)
ছোট্ট চড়ুই পাখি সারা দিন ফুড়ুত ফুড়ুত করে গাছের এ-ডাল থেকে ও-ডালে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট্ট এক পাখি দেখা যায়। চড়ুইয়ের মতোই সারা দিন ডানা ঝাঁপটিয়ে ওড়াউড়িতে তাদের ক্লান্তি নেই মোটেই। 
মজার ব্যাপার হলো, এই পাখি যখন ওড়ে তখন তার ডানার দ্রুত সঞ্চালনের ফলে বাতাসে গুনগুন শব্দ হয়। গুনগুন করাকে ইংরেজিতে হামিং (Humming) বলে। এ জন্যই এই পাখির নাম হামিং বার্ড। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হলো এই হামিং বার্ড।

 এই পাখি খুব শৌখিন। অতি উজ্জ্বল গায়ের রং। পালকের উজ্জ্বল রং ও বৈচিত্র্যের কারণে স্ত্রী পাখিদের তুলনায় পুরুষ হামিং বার্ড দেখতে বেশি সুন্দর। এই পাখির বাসা দেখলেই এর শৌখিনতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্যান্য পাখি যেমন খড়কুটো, গাছের পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে, সেখানে এরা বাসা তৈরি করে কোমল পালক এবং ফুলের পাপড়ি দিয়ে। সেই নরম তুলতুলে বাসায় এরা শুধু রাতেই বিশ্রাম নেয়। অবিরাম ছোটাছুটির কারণে দিনে বিশ্রাম নেওয়ার সময় কোথায়?

গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার উড়তে পারে এরা। ওড়ার সময় এদের ছোট্ট দুটি ডানা গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৮০ বার ওঠানামা করে। তখন এদের ডানার পালক পর্যন্ত দেখা যায় না। চোখে পড়ে শুধু আবছা এক রঙের ছটা। দ্রুত ডানা সঞ্চালনের আশ্চর্য এই ক্ষমতার জন্য হামিং বার্ড উড়ন্ত অবস্থায় শূন্যে এক জায়গায় স্থির হয়ে ভেসে থাকতে পারে। এতে অবশ্য তার লাভই হয়। কারণ, উড়তে উড়তেই খাবারটা সংগ্রহ করে নেওয়া যায়। এ জন্য পায়ের ওপর ভর দিয়ে কোনো ডালে বসতে হয় না। তা ছাড়া, পায়ের চেয়ে ডানার ওপরই এদের ভরসা বেশি।
হামিং বার্ড ফুল থেকে মধু খাওয়ার সময়ও শূন্যে ভেসে থাকে। এভাবেই তারা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে গিয়ে মধু খায়। তারা সারা দিন যেহেতু ডানা সঞ্চালনের ওপর নির্ভর করে কাটায়, এ জন্য তাদের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে এই পাখি সারা দিনে প্রচুর খায় আর শক্তি সঞ্চয় করে। অথচ রাতের বেলা এদের উল্টো অবস্থা। তখন শুধুই বিশ্রাম। ফলে রাতে এদের ক্যালরি খরচের ভয় নেই। 

একটি হামিং বার্ডের সারা দিন যে ক্যালরি লাগে, তা একজন বয়স্ক মানুষের প্রয়োজনীয় ক্যালরির তুলনায় প্রায় ৪০ গুণ বেশি। 
শুধু পাখি কেন, পৃথিবীতে উষ্ণ রক্তের আর এমন কোনো প্রাণী নেই, যার দেহের অনুপাতে এত বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। অথচ পুঁচকে এই পাখি দৈর্ঘ্যে হয় মাত্র ৫.৭ সেন্টিমিটার এবং ওজন হয় মাত্র ১.৬ গ্রাম। অর্থাৎ কাগজের একটি খামের ওজনের সমান এদের ওজন।

স্ত্রী হামিং বার্ড একবারে সাধারণত দুটি ডিম পাড়ে। সাদা রঙের এই ডিম আকারে যত ছোটই হোক তা স্ত্রী হামিং বার্ডের ওজনের ১৩ শতাংশ। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে তিন সপ্তাহ। তারপর এক মাসের মধ্যেই বাচ্চা উড়তে শিখে যায়। হামিং বার্ড বেজায় সাহসী। সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। কারণ, সাধ্যে না কুলালে ফুড়ুত করে উড়াল দিয়ে বিপদ এড়িয়ে কীভাবে পালাতে হয়, তা এরা ভালোই জানে।
বৈজ্ঞানিক নাম : Archilochus colubris
প্রজাতির সংখ্যা : ৩১৫
প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট : বি হামিং বার্ড
বাসস্থান : আমেরিকা
গড় আয়ু : ১-২ বছর

বুধবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

একজন হোমো স্যাপিয়েন্স


ছেলেটাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল এই জন্য যে, তার স্মৃতি শক্তি অত্যধিক দুর্বল। এই ছেলেকে দিয়ে জীববিজ্ঞানের মতো ভাইটাল সাবজেক্ট পড়া সম্ভব না। তাকে অন্য বিষয় পড়তে দেয়া হোক যেটা তার জন্য সোজা। পরবর্তীকালে ইনিই হয়েছিলেন দ্বিপদ নামকরনের জনক। বিশ্ব তাকে চেনে বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস নামে।
লিনিয়াসের জন্ম দক্ষিণ সুইডেনের সামালান্দের এক গ্রামে। তার পূর্বপুরুষ কেউই শেষ নাম ব্যবহার করতেন না। তাদের নাম রাখা হতো স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশের প্যাট্রোনিমিক (পিতার নামের সাথে সংযুক্ত) নিয়মে। তার বাবাই প্রথম শেষ নামের প্রচলন করেন। বাড়ির সামনের এক বিশাল লিন্ডেন গাছের নামানুসারে লিনিয়াস নামটিই বেছে নেন।ক্যারোলাস লিনিয়াসের জন্ম ১৭০৭ সালে সুইডেনের স্মেলেন প্রদেশের র‌্যাশাল গ্রামে। পিতা নিলস লিনিয়াস গির্জার পাদরি। মা-বাবা চেয়েছেন তিনিও যাজক হবেন, কিন্তু হলেন চিকিৎসক।খনিজ, উদ্ভিদ নিয়ে লেখালেখি করে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। লিনিয়াস শিক্ষাজীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন উপসালা ইউনিভার্সিটিতে। ১৭৩০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৭৩৫ থেকে ১৭৩৮ সাল পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন এবং এ সময়ই নেদারল্যান্ড থেকে তার Systema Naturae গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এরপর সুইডেনে ফিরে এসে উপসালাতে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৭৪০-এর দশকে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস করার জন্য তাকে সুইডেনের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছিল। ১৭৫০ ও ৬০-এর দশকে তিনি এই শ্রেণীবিন্যাস চালিয়ে যান এবং ভলিউম ভলিউম বই প্রকাশ করেন। অনেক প্রাণী বা উদ্ভিদের দ্বিপদী নামের শেষে যে নাম রেখেছেন তার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ স্থান পায়। ।লিনিয়াস যে নামগুলো রেখেছেন সেগুলোর শেষে "L" অক্ষরটি থাকে।
লিনিয়াস উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিগুলোর নামকরণের নৈরাজ্য দূর করে দ্বিপদী নামকরণ চালু করেন। তাঁর প্রবর্তিত নামকরণের আগে বিভিন্ন প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম ছিল অনেক দীর্ঘ। লিনিয়াস মানুষ প্রজাতির নাম রাখেন Homo sapiens . লিনিয়াস ভিন্নার্থে এটি ব্যবহার করেছিলেন—হোমো স্যাপিয়েন্স হলো—হোমো ‘নসে তে ইপসাম’ অর্থাৎ Man know thyself—আত্মানং বিধ্বি, মানুষ নিজেকে জানো। গভীরতর অর্থবহ এই অভিধা। আগেও মানুষ ছিল হোমো ইরেকটাস, হোমো হ্যাবিলিস, হোমো নিয়ানডারথেলেনসিস ইত্যাদি। সাত হাজার ৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও চার হাজার ৪০০ প্রাণীর নামকরণ ছাড়াও তিনি স্পিসিস প্লান্টারাম (১৭৫৩), জেনেরা প্লান্টারাম (১৭৫৪) ও সিস্টেমা ন্যাচারই (১৭৫৮) বইয়ের লেখক। প্রথম দুটি উদ্ভিদ ও তৃতীয়টি প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাস ও নামকরণবিষয়ক এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
মৃত্যুর সময় সমগ্র ইউরোপ জুড়ে অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি ১৭৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কবরের নামফলকে শেষ ইচ্ছানুসারে লিনিয়াসের নামের পাশে Homo sapiens শব্দটি যুক্ত হয়েছে।