মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯

হামিং বার্ড(Smallest bird in the world)
ছোট্ট চড়ুই পাখি সারা দিন ফুড়ুত ফুড়ুত করে গাছের এ-ডাল থেকে ও-ডালে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট্ট এক পাখি দেখা যায়। চড়ুইয়ের মতোই সারা দিন ডানা ঝাঁপটিয়ে ওড়াউড়িতে তাদের ক্লান্তি নেই মোটেই। 
মজার ব্যাপার হলো, এই পাখি যখন ওড়ে তখন তার ডানার দ্রুত সঞ্চালনের ফলে বাতাসে গুনগুন শব্দ হয়। গুনগুন করাকে ইংরেজিতে হামিং (Humming) বলে। এ জন্যই এই পাখির নাম হামিং বার্ড। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হলো এই হামিং বার্ড।

 এই পাখি খুব শৌখিন। অতি উজ্জ্বল গায়ের রং। পালকের উজ্জ্বল রং ও বৈচিত্র্যের কারণে স্ত্রী পাখিদের তুলনায় পুরুষ হামিং বার্ড দেখতে বেশি সুন্দর। এই পাখির বাসা দেখলেই এর শৌখিনতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্যান্য পাখি যেমন খড়কুটো, গাছের পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে, সেখানে এরা বাসা তৈরি করে কোমল পালক এবং ফুলের পাপড়ি দিয়ে। সেই নরম তুলতুলে বাসায় এরা শুধু রাতেই বিশ্রাম নেয়। অবিরাম ছোটাছুটির কারণে দিনে বিশ্রাম নেওয়ার সময় কোথায়?

গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার উড়তে পারে এরা। ওড়ার সময় এদের ছোট্ট দুটি ডানা গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৮০ বার ওঠানামা করে। তখন এদের ডানার পালক পর্যন্ত দেখা যায় না। চোখে পড়ে শুধু আবছা এক রঙের ছটা। দ্রুত ডানা সঞ্চালনের আশ্চর্য এই ক্ষমতার জন্য হামিং বার্ড উড়ন্ত অবস্থায় শূন্যে এক জায়গায় স্থির হয়ে ভেসে থাকতে পারে। এতে অবশ্য তার লাভই হয়। কারণ, উড়তে উড়তেই খাবারটা সংগ্রহ করে নেওয়া যায়। এ জন্য পায়ের ওপর ভর দিয়ে কোনো ডালে বসতে হয় না। তা ছাড়া, পায়ের চেয়ে ডানার ওপরই এদের ভরসা বেশি।
হামিং বার্ড ফুল থেকে মধু খাওয়ার সময়ও শূন্যে ভেসে থাকে। এভাবেই তারা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে গিয়ে মধু খায়। তারা সারা দিন যেহেতু ডানা সঞ্চালনের ওপর নির্ভর করে কাটায়, এ জন্য তাদের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে এই পাখি সারা দিনে প্রচুর খায় আর শক্তি সঞ্চয় করে। অথচ রাতের বেলা এদের উল্টো অবস্থা। তখন শুধুই বিশ্রাম। ফলে রাতে এদের ক্যালরি খরচের ভয় নেই। 

একটি হামিং বার্ডের সারা দিন যে ক্যালরি লাগে, তা একজন বয়স্ক মানুষের প্রয়োজনীয় ক্যালরির তুলনায় প্রায় ৪০ গুণ বেশি। 
শুধু পাখি কেন, পৃথিবীতে উষ্ণ রক্তের আর এমন কোনো প্রাণী নেই, যার দেহের অনুপাতে এত বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। অথচ পুঁচকে এই পাখি দৈর্ঘ্যে হয় মাত্র ৫.৭ সেন্টিমিটার এবং ওজন হয় মাত্র ১.৬ গ্রাম। অর্থাৎ কাগজের একটি খামের ওজনের সমান এদের ওজন।

স্ত্রী হামিং বার্ড একবারে সাধারণত দুটি ডিম পাড়ে। সাদা রঙের এই ডিম আকারে যত ছোটই হোক তা স্ত্রী হামিং বার্ডের ওজনের ১৩ শতাংশ। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে তিন সপ্তাহ। তারপর এক মাসের মধ্যেই বাচ্চা উড়তে শিখে যায়। হামিং বার্ড বেজায় সাহসী। সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। কারণ, সাধ্যে না কুলালে ফুড়ুত করে উড়াল দিয়ে বিপদ এড়িয়ে কীভাবে পালাতে হয়, তা এরা ভালোই জানে।
বৈজ্ঞানিক নাম : Archilochus colubris
প্রজাতির সংখ্যা : ৩১৫
প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট : বি হামিং বার্ড
বাসস্থান : আমেরিকা
গড় আয়ু : ১-২ বছর